গোয়াইনঘাট(সিলেট) প্রতিনিধিঃঃ
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট সারাদেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখতে বছর জোড়ে পর্যটকদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মত।
ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দিবসের ছুটিতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে সিলেটের পিকনিক স্পটগুলো। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
প্রকৃতি কন্যা হিসাবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত সিলেটের জাফলং। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি।
পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। জাফলং, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত, একটি পর্যটনস্থল।
জাফলং, সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত, এবং এখানে পাহাড় আর নদীর অপূর্ব সম্মিলন বলে এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত।
সীমান্তের ওপারে ভারতীয় পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি,উঁচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও শুনশান নিরবতার কারণে এলাকাটি পর্যটকদের দারুণ ভাবে মোহাবিষ্ট করে। এসব দৃশ্যপট দেখতে প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে। প্রকৃতি কন্যা ছাড়াও জাফলং বিউটি স্পট, পিকনিক স্পট, সৌন্দর্যের রাণী- এসব নামেও পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিত। ভ্রমন পিয়াসীদের কাছে জাফলং এর আকর্ষণই যেন আলাদা। সিলেট ভ্রমণে এসে জাফলং না গেলে ভ্রমণই যেন অপূর্ণ থেকে যায়।
জাফলংয়ে শীত ও বর্ষা মওসুমের সৌন্দর্যের রূপ ভিন্ন। বর্ষায় জাফলং এর রূপ লাবণ্য যেন ভিন্ন মাত্রায় ফুটে উঠে। ধূলি ধূসরিত পরিবেশ হয়ে উঠে স্বচ্ছ।
স্নিগ্ধ পরিবেশে শ্বাস-নি:শ্বাসে থাকে ফুরফুরে ভাব। খাসিয়া পাহাড়ের সবুজাভ চূড়ায় তুলার মত মেঘরাজির বিচরণ এবং যখন-তখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি পাহাড়ি পথ হয়ে উঠে বিপদ সংকুল-সে যেন এক ভিন্ন শিহরণ। সেই সঙ্গে কয়েক হাজার ফুট উপর থেকে নেমে আসা সফেদ ঝর্ণাধারার দৃশ্য যে কারোরই নয়ন জুড়ায়।
পবিত্র মিলাদুন্নবী (সঃ)উপলক্ষে ও সাপ্তাহিক টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটন নগরী গোয়াইনঘাটে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। পর্যটকদের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাসে হিম শীতল স্বচ্ছ জলে নেমে গোসলে মেতেছেন অনেকেই। কেউবা ঘুরে ঘুরে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। কেউ এসেছেন পরিবারসহ, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে। আনন্দে মেতেছেন পর্যটকরা।
হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পর্যটকদের প্রচারণায় খুশি ব্যবসায়ীরা। সরেজমিনে জানা যায়, পবিত্র মিলাদুন্নবী’সহ সাপ্তাহিক ছুটিতে সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত শাহপরাণ (রহ.) ও গাজী বুরহান উদ্দিনের মাজারসহ পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর, জাফলং, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, লাক্কাতুরা চা বাগানে পর্যটকটরা ভিড় করছেন।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ২৮সেপ্টেম্বর থেকে ৩০সেপ্টেম্বর মোট তিনদিনের টানা ছুটিতে পর্যটন স্পট গুলোতে ভ্রমণ পিপাসুদের আনাগোনা বেড়েছে। এছাড়াও জেলার বেশ কিছু হোটেলের অধিকাংশ কক্ষ আগাম ছুটির অনেক আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রেখে ছিলেন পর্যটকেরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,প্রকৃতি কন্যা হিসেবে সারা দেশে এক নামে পরিচিত জাফলং পর্যটনস্পট। সর্ব সময়ের ধারাবাহিকতায় এবারও জাফলং পর্যটকদের প্দচারণায় রয়েছে প্রথম স্থানে।প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে লোকে লুকারণ্য যেন পুরো পিকনিক স্পট এলাকা। বাস, ট্রাক, মিনি বাসসহ ছোট যানবাহনে করে ভ্রমণ প্রিয় মানুষজন এখানে এসে আনন্দ ভাগাভাগি করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন।
এ যেন পর্যটকদের পাশাপাশি গাড়ির হাট বসেছে।লাইনে লাইনে ছোট বড় সব ধরনের গাড়ির বহর। সবুজ সতেজ পাতায় নিজেকে আবৃত্ত করতে তারা ছুটে এসেছে প্রকৃতির দোরগোড়ায়। দিগন্ত জোড়া পাহাড়, ছোট বড় টিলা, পাহাড়ের গায়ে সবুজ লক্ষ লক্ষ গাছের সারী, পিয়াইনের বুকচিরে বয়ে চলা প্রবাহমান পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ স্ফটিক জল, নুড়ি পাথর, চা বাগান, গহীন বন, হিজল করচের অরণ্য ঘেরা সবুজ বেষ্টনী, পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা ঝর্ণা ধারায় গা ভিজিয়ে ছবি সেলফিতে নিজেদের আবদ্ধ করে আনন্দে ভাগাভাগি করছেন আগত পর্যটক দর্শনার্থীরা।
রাজশাহী থেকে আসা রিয়াজ উদ্দিন ও ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা মৌসুমী বলেন,গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রকৃতি ও পরিবেশ অত্যন্ত চমৎকার যা মন ছুঁয়ে যায়। পর্যটকদের উপস্থিতির অবস্থানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মিঠা পানির জলাবন সোয়াম ফরেস্ট রাতারগুল এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট ঘর দিয়ে তৈরি বাংলাদেশের একমাত্র সৌন্দর্যের প্রতীক পান্তুমাই গ্রামে অবস্থিত পান্তুমাই পর্যটন স্পট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটন স্পট বিছনাকান্দি।
গোয়াইনঘাট উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি )কে এম নজরুল জানান,বেশ কিছুদিন পর লাগাতার তিন দিনের ছুটিতে ভ্রমন পিপাসু পর্যটকরা পরিবার পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব যে যার যার মত করে এসেছে। এই ছুটির সময়টা তাদের প্রিয় মানুষদের নিয়ে ভ্রমণের মাধ্যমে আনন্দে কাটাতে।তিনি জানান,গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটন স্পট সহ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পর্যটন স্পট সাদা পাথরে পর্যটকদের পদচরণায় মুখরিত। ছুটির প্রথম দিনে পর্যটক কিছুটা কম থাকলেও দ্বিতীয় দিনে এসে পর্যটন স্পট গুলোতে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
তৃতীয়দিনে পর্যটকের এমন উপস্থিতি থাকবে না বলে তিনি জানান।কারণ পরের দিন অফিস আদালত খোলা। তিনি আরো জানান,আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তারা যাতে স্বাচ্ছন্দে ভ্রমন করতে পারে কোনভাবে হয়রানির শিকার না হয় তার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
প্রতিটা পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে ট্যুরিস্ট পুলিশ জাফলং জোনের ইন্সপেক্টর রতন শেখ বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা সবসময় নিয়োজিত আছি।
পর্যটকরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারেন সেজন্য আমরা কাজ করছি। এছাড়াও বিভিন্ন স্পটের নৌকার ভাড়া নির্ধারণ করা আছে।
কোনো অবস্থাতেই এর থেকে বেশি নেওয়া যাবে না। তিনি বলেন তিন দিনের ছুটিতে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আসছে। সে জন্য আমাদের পক্ষ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
শুধু পর্যটনে নয়, সব জায়গায় আমাদের পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।