ওয়াসার চলমান উন্নয়নকার্যক্রমে বাধা সৃষ্টিকারীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি

ওয়াসার ভেতরে আরেকটি ওয়াসা কাজ করছে। নাগরিকের মৌলিক অধিকার সুপেয় পানি নিশ্চিতের বিপরীতে ওয়াসাকেই যেন বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র প্রতীয়মান। ওয়াসার উন্নয়ন কর্মকান্ডের বাধা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি নিশ্চি করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব।

মঙ্গলবার (২৩ মে ২০২৩) সকাল ১০:৩০ মিনিটের সময় বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ-এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘সার্বজনীন সুপেয় পানির চলমান কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের দাবী’তে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে এমন মন্তব্য করেন বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়।

মনববন্ধনে মূল বক্তা কবীর চৌধুরী তন্ময় বলেন, ওয়াসার ভেতরকার ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ওয়াসাকে বিতর্কিত করার মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টিই যেন তাদের মূল লক্ষ্য। সরকারের লক্ষ্যমাত্র সুপেয় পানি সকলের জন্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা যাতে কোনোভাবেই পূরণ না হয়, তার ষড়যন্ত্র অব্যহাত আছে বলে আমরা মনেকরি।

কবীর চৌধুরী তন্ময় আরও বলেন, একটি মহল বিভিন্নভাগে বিভক্ত হয়ে ওয়াসার বিরুদ্ধে কাজ করছে যাতে ওয়াসার সাথে সরকারের ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কোনো ধরণের সঠিক তথ্য-প্রমাণ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ গণমাধ্যমেও ভুল তথ্য দিয়ে তারা জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে ষড়যন্ত্র করছে। যত দ্রুত সম্ভব, ওইসব ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে তাদের মুখোশ উন্মোচনের সাথে ষড়যন্ত্র-অপরাধের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

সংগঠনের আহ্বায়ক ও মানববন্ধনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে ঢাকার সিটি ও আশপাশের এলঅকা অর্থাৎ প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বসবাসকারী প্রায় ২ কোটি ৫০ লক্ষ নাগরিকের জন্য দৈনিক চাহিদা প্রায় ২৪০ কোটি লিটার এর বিপরীতে বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা উৎপাদন করছে প্রায় ২৬০ কোটি লিটার। নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে প্রায় ৯৮ শতাংশ।

 

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের ১৭টি শর্তের মধ্যে ৬নম্বর-টি হচ্ছে সুপেয় পানি নিয়ে এবং সকলের জন্য সুপেয় পানির লক্ষ নির্ধারন করা হয়েছে ২০৩০ সাল। এই লক্ষ মাত্রাকে সামনে নিয়ে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে পূর্বের ওয়াসার ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন সাধন করে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানকে নিয়োগ দেয়। পরবর্তীতে বর্তমান ব্যবস্থাপক সরকারের নির্দেশে ‘ঘুড়ে-দাঁড়াও’ ঢাকা ওয়াসা কর্মসূচি নিয়ে পানি ও পয়ঃনিস্কাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ঢাকাসহ এর আশেপাশের এলাকায় পানি সরবরাহ ও পয়ঃ নিষ্কাশন নিশ্চিত করার জন্য ১৯৬৩ সালে ঢাকা ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

সরকারের নেয়া পরিকল্পনার অংশ হিসাবেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনায় এবং মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় সুপেয় পানি নিশ্চিত করার লক্ষে দেশী বিদেশেী অর্থায়নে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে ওয়াসা কাজ করে যাচ্ছে।

পানি সরবরাহ ও পয়ঃ নিষ্কাশন উভয় মহাপরিকল্পনা বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। পানি সরবরাহ মহাপরিকল্পনার আওতায় সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প ফেজ-২, তেতুলঝড়া-ভাকুর্তা ওয়েল ফিল্ড প্রকল্প, পদ্মা যোশলদিয়া পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে যার সুবিধা নগরবাসী এখন পাচ্ছে। গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার পানি প্রকল্প এখন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ২০২৪ সালে গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগারের সুবিধা নগরবাসী পাবে।

 

এছাড়া পানি সরবরাহ মহাপরিকল্পনার আওতায় সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেইজ-৩ বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ঢাকা ওয়াসার পুরানো জরাজীর্ণ পানির লাইন পরিবর্তন করে আধুনিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপনের লক্ষ্যে  DMA    সিস্টেম  Introduce     করা হয়েছে। বর্তমানে সে প্রকল্প বান্তবায়নাধীন রয়েছে এবং ইতিমধ্যেই ঢাকা শহরের অর্ধেকের বেশী এলাকায়  DMA System    স্থাপন করা হয়েছে।

আমরা জানতে পেরেছি সিস্টেম লসের কারনে শতভাগ নিরবিচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ করা সম্ভবপর নয়। তাই সিস্টেম লস কমাতে ঢাকা ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্ব গ্রহণের আগে ঢাকা ওয়াসার  System Loss  ছিল ৪০% এর বেশী। কিন্তু গত ১০ বছরে সিস্টেম লস কমিয়ে  DMA     এলাকায় ৫% এ নামানো সম্ভব হয়েছে এবং  DMA     এলাকার বাহিরে তা ২০% নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোাষিত  Digital Bangladesh  কর্মসূচীর সাথে তাল রেখে ঢাকা ওয়াসাতেও উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়েছে  Digital WASA  রূপান্তরের। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে পানি সরবরাহ ও পয়ঃ নিষ্কাশন ব্যবস্থায়  SCADA System  যোগ করা হয়েছে যার মাধ্যমে যাবতীয় পরিচালন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এছাড়াও, রিয়েল টাইম ই-বিলিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে যাতে করে গ্রাহক সার্বক্ষণিক যে কোন মাধ্যম ব্যবহার করে-যেমন মোবাইল ব্যাংকিং, বিকাশ, নগদ, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ইত্যাদি মাধ্যমে পানির বিল পরিশোধ করতে পারে। সেই সাথে ঢাকা ওয়াসায় ই-ফাইলিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে এবং বর্তমান সরকারের কর্মসূচীর সাথে তাল রেখে সমস্ত ক্রয়-কার্যক্রম ই-জিপি এর মাধ্যমে করা হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসার সর্বত্রই  Digital     কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে এবং হচ্ছে।

একই সাথে ঢাকা ওয়াসা পয়ঃ নিষ্কাশন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে দাশেরকান্দি পয়ঃ শোধনাগার নির্মাণ করেছে এবং পাগলা পয়ঃ শোধনাগার বাস্তবায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। পাশাপাশি উত্তরা, মিরপুর এবং রায়ের বাজারে পয়ঃ শোধনাগার নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যেই পয়ঃ নিষ্কাশন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এতে করে বাংলাদেশের ঝউএ-৬.১ ও ৬.২ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত ৮ম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হচ্ছে এবং হবে।

ঢাকা ওয়াসা একটি গণমূখী পানি সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ঢাকা শহরের সকল বস্তি এলাকাকে বৈধ পানি সরবরাহ সেবার আওতায় নিয়ে এসেছে। এখন সকল বস্তিবাসী সুপেয় পানি পাচ্ছে। এছাড়াও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য  Water ATM  চালু করা হয়েছে। নগরবাসী এই  Water ATM  এর মাধ্যমে অত্যন্ত কম মূল্যে পরিশোধিত পানি পান করতে পারছে।

২৪ ঘন্টা গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করার জন্য এবং গ্রাহকের সকল ধরণের অভিযোগ গ্রহণের জন্য ঢাকা ওয়াসা চালু করেছে হেল্প লাইন  WASA Link   , ১৬১৬২.
একটা সময় ছিল যখন ঢাকা ওয়াসাকে তহবিল সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে যেতে হত। ঢাকা ওয়াসার এই সার্বিক সংস্কার ও ‘‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা কর্মসূচী’’ এর মাধ্যমে নিজেদের  Bankable Organi“ation  হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। যার ফলে ২০০৯-১০ সালে থেকে ঢাকা ওয়াসায় যে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুন।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন অবিভক্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক ১০ ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব মো. ফজলুল হক, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা জিয়াউল হক জিয়া, সাগর আহমেদ, ডা. আমিনুল ইসলাম, শেখ ফরিদ ও রোকেয়া বেগম প্রমুখ।

 

 

 

—বিজ্ঞপ্তি ।।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।