প্রবাসীদের আবেগ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে প্রকাশিত দুটি বই, এবং বইমেলার সৌন্দর্য !
কবির আল মাহমুদ::
পৃথিবীর সর্বত্র প্রতিদিনই নিঝুম সন্ধ্যা নামে, শাশ্বত নিয়মে। পাখিরা নীড়ে ফেরে দিবারাত্রির চক্র মেনে। তেমনিভাবে গত ২৮ ফেব্রুয়ারী শেষ হল বাঙালীর প্রাণের মেলা, অমর একুশে বইমেলা। প্রাণের মেলা শেষে ঘরে ফিরেছেন লেখক, প্রকাশক এবং পাঠকরা। তবে এ ফেরাই শেষ ফেরা নয়, ২০২৪-এর ফেব্রুয়ারিতে আবারও সাজবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, স্টল কিংবা প্যাভেলিয়নে প্রকাশকরা বসবেন বইয়ের পসরা সাজিয়ে। পাঠক আগ্রহচিত্তে আবারও বই কিনতে যাবেন। তবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো এগারো মাস তা কিন্তু নয়, আর বিদায় শেষ বিদায় নয় ! তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে, সারা বছরই অনলাইন বুকশপগুলো থেকে পাওয়া যাবে তাদের পছন্দের বই । আশার কথা, বাঙালীর প্রাণের এই মেলাকে কেন্দ্র করে পতি বছরই বাড়ছে প্রবীণ লেখকদের পাশাপাশি নবীন লেখক-প্রকাশক। শিকড়কে ভুলে না যেয়ে প্রবীণদের পাশাপাশি নবীনদের বরণ করা। এটাই বইমেলার সৌন্দর্যই।
এবারের বইমেলায় প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক ও গীতিকার জমির হোসেনের দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘জীবনের যত গান’ প্রকাশিত হয়েছে। ২০২০ সালে একুশে বইমেলায় লেখকের প্রথম গ্রন্থ প্রবাসে ‘মেঘ জোৎস্না’ গন্থটি দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়।
এবারের বইটি গীতিকাব্য দিয়ে সাজানো। দেশি-বিদেশি পাঠকের জন্য ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। পরে ইতালিয়ানসহ অন্যানো ভাষায় অনুবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ফেলে আসা জীবনের অতীত, বর্তমান অনেক স্মৃতি আনন্দ-বেদনা। এমন ভাবনা থেকেই বোধকরি লেখক জমির হোসেন তার দীর্ঘ প্রবাস-যাপনের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন জীবনের গান ও প্রবাসের মেঘ-জ্যোৎস্না বই দুটি।
ইউরোপ-বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক জমির হোসেন তার দীর্ঘ প্রবাস জীবনের নানা অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে জীবিকার তাগিদে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা সোয়া কোটি বাংলাদেশির কথা পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন।
তাই দুটো বই সম্পর্কে দুটো কথা লিখতে বসলাম। এর আগে আমি কখনো কোনো গন্থ/বই নিয়ে লেখার সাহস করিনি। যেখানে একটি পৃষ্ঠা লিখতে শুরু হয় দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম: ‘গন্থ সমালোচনা’ বলতে যা বোঝায়, তা কিন্তু নয়। আমি শুনেছি যারা ‘বই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা’ করে থাকেন বা লেখেন তারা বই রচয়িতার চেয়ে বেশি পাণ্ডিত্য রাখেন। সাহিত্য সম্পর্কে আমার জ্ঞান অতি সীমিত। কোনও কালে ছিল না এবং এখনও নেই। অতএব বই-পুস্তক নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করার সাহস কিংবা শক্তি কোনোটাই আমার নেই।
দীর্ঘকাল প্রবাসে থেকেও মাতৃভূমির সঙ্গে লেখক জমির হোসেনের এক ধরনের নাড়ির টান রয়েই গেছে। তার লেখালেখির বিষয়সমূহও তার প্রমাণ করে। যুগান্তর ও জাগো নিউজের কল্যাণে লেখকের সঙ্গে আমার পরিচয় ইউরোপ পাড়ি দেওয়ার আগে থেকেই। লেখক তার প্রবাস জীবনের নানা অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে জীবিকার তাগিদে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা সোয়া কোটি বাংলাদেশির কথা কিছুটা হলেও পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। লেখাগুলো সুপাঠ্য, ভাষা প্রাঞ্জল এবং মার্জিত। লেখার যে বিষয়টা আমাকে অবাক করেছে তা হলো, সামাজিক অসঙ্গতি, হানাহানি-মৃত্যু ইত্যাদি বেশ কিছু বিষয় আলোচনাকে তিনি দারুণ রস দিয়েছেন।
দ্বিতীয় বইটি সম্প্রতি অমর একুশে বই মেলায় প্রকাশিত গন্থটির নাম ‘জীবনের যত গান’। এবারের এই বইটি গীতিকাব্য দিয়ে সাজানো নামটি শুনতে অনেকটা রোমান্টিক মনে হলেও প্রথম যে বইটি শুরু করেছিলাম, সেটার নাম যথার্থ এবং ‘হৃদয় বিদারক’। এটি কোনও গল্প বা উপন্যাস বা প্রবন্ধ সংকলন নয়। অনেকটা আত্মজীবনীর মতো, আবার আত্মজীবনীও নয় ঠিক লেখক প্রবাসের সুখ-দুঃখ, সুবিধা-অসুবিধা, চাওয়া-পাওয়ার কথা ফুটে উঠেছে। দেশি-বিদেশি পাঠকের জন্য ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
লেখকের ভাষায় ‘সুন্দর পরিচ্ছন্ন সমাজ বিনির্মাণে সাহিত্য চর্চার কোনো বিকল্প নেই। আর বই পড়া তার-ই বড় একটি অংশ। পাশাপাশি একটি বই একজন মানুষকে পরিবর্তন করতে পারে খুব সহজে। অসৎ পথের উল্টো দিকে পথচলায়ও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, শত ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে এক একটি লেখার আবিষ্কার।’
আশা করি পাঠকদের ভালো লাগবে। এছাড়া এই বইয়ের একটি কবিতা এরই মধ্যে গানের জন্য রেকর্ডিং সম্পন্ন করা হয়েছে। খুব শিগগিরই তা মুক্ত করা হবে। রোমান্টিক ধাচের এ গানের সুর করেছেন তরুণ সুরকার মুরাদ নুর, সঙ্গীত আয়োজনে মুশফিক লিটু এবং গেয়েছেন শিল্পী রুনা বিক্রমপুরী।
২০২০ সালে লেখকের প্রথম অর্থবহ প্রকাশনা ‘প্রবাসে মেঘ জোৎস্না’ নামক ৯৬ পৃষ্ঠার প্রথম গ্রন্থটির ন্যায় এবারও লেখকের দ্বিতীয় চমৎকার গীতিকাব্য ‘জীবনের যত গান’ গন্থটির শুভেচ্ছা মূল্য মাত্র ২০০ টাকা। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ইউনুস নাজিম। পরিবার পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয় ‘জীবনের যত গান’।
প্রবাস জীবনের সংকট, আশা-নিরাশা, ভ্রমণ, সাহিত্য-সংস্কৃতির সাবলীলভাবে প্রতিফলিত হয়েছে বই দুটোয়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সমাজ জীবনের দুর্লভ সবকিছুর রয়েছে সরল বয়ান। এই বই দুটোই প্রবাস জীবনের আবেগ-উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি ও প্রবাসীদের আরো বেশি জানতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।