ভারত-কানাডা সম্পর্কে উত্তেজনা, পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার
সুরমা টাইমস ডেস্ক :
খালিস্তানপন্থী ভারতীয় বংশদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফের গরম হয়ে উঠেছে ভারত-কানাডার সম্পর্ক।
গত বছর খুন হওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী ওই শিখ নেতার হত্যার সঙ্গে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেছে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
এর জের ধরে কানাডিয়ান কূটনীতিকদের শনিবারের মধ্যে দিল্লি ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ভারত। এর জবাবে কানাডাও ভারতীয় ছয় কূটনীতিককে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। এতে দুই দেশের বৈরি সম্পর্কে বড় ধরণের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল সোমবার (১৪ই অক্টোবর) হিন্দুস্থান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ভারতে নিযুক্ত কানাডার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার স্টুয়ার্ট রস হুইলার, ডেপুটি হাইকমিশনার প্যাট্রিক হেবার্ট, ফার্স্ট সেক্রেটারি মেরি ক্যাথরিন জোলি, ইয়ান রস ডেভিড ট্রাইটস, অ্যাডাম জেমস চুইপকা এবং পলা অর্জুয়েলাকে নয়া দিল্লি বহিষ্কার করেছে।
এর আগে কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মাকে দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়া দিল্লি।
কানাডায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সঞ্জয় ও ভারতের কয়েকজন কূটনীতিকের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনার পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নয়াদিল্লিতে নিয়োজিত কানাডার হাইকমিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তলব করে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কানাডায় চরমপন্থী ও সহিংসতাময় এক পরিবেশের মধ্যে দেশটির সরকারের নানা পদক্ষেপ হাইকমিশনার ও কয়েকজন কূটনীতিকের নিরাপত্তা বিপদের মধ্যে ফেলেছে।
তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অটোয়া যে নিশ্চয়তা দিয়েছে, তাতে ভারতের আস্থা নেই। তাই হাইকমিশনারসহ ওই কূটনীতিকদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালে কানাডায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন খালিস্তানপন্থী নেতা নিজ্জর। তিনি ভারতের পাঞ্জাবে শিখ সম্প্রদায়ের জন্য ‘খালিস্তান’ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ছিলেন।
নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই এর সঙ্গে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে আসছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তবে সে অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে নয়াদিল্লি।
নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয় ভারতের হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মার বিরুদ্ধেও। গতকাল রোববার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে অটোয়ার পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় হাইকমিশনারসহ কয়েকজন কূটনীতিককে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জবাবি বার্তায় বলা হয়, সঞ্জয় ভার্মা তার ৩৬ বছরের কর্মজীবনে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি জাপান ও সুদানেও ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। এ ছাড়া সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন ইতালি, তুরস্ক, ভিয়েতনাম ও চীনে। তার বিরুদ্ধে কানাডা সরকার যে অভিযোগ ও অপবাদ দিয়েছে, তা হাস্যকর ও উপেক্ষণীয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, জাস্টিন ট্রুডোর সরকার যেভাবে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও হিংসাকে সমর্থন দিচ্ছে, তার জবাবে অন্য যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকার থাকছে ভারতের।
এ ঘটনায় এর আগেও গত বছর কানাডাকে তাদের ৬২ জন কূটনীতিকের মধ্যে ৪১ জনকে সরিয়ে নিতে বলে ভারত।
এরপর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক শীতল হয়ে ওঠে। আজ ভারতের ৬ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ফলে দুই দেশের ভঙ্গুর সম্পর্কে ফের বড় ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিটিশ কলম্বিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের একজন বিশিষ্ট শিখ নেতা ছিলেন হারদিপ সিং নিজার। খালিস্তানের পক্ষে তিনি প্রকাশ্যে প্রচারণা চালিয়েছেন।
খালিস্তানের পক্ষে সক্রিয়তার কারণে তাকে বেশ কয়েকবার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে নিজারের সমর্থকরা।
ভারতও নিজারকে এর আগে বর্ণনা করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দেওয়া সন্ত্রাসী হিসেবে। ভারতের এসব অভিযোগ নিজারের সমর্থকরা ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিল।