দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতি রোধ ও বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ মজুরি ঘোষণার দাবি
দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতি রোধ, বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন, সর্বজনীন রেশনিং ব্যবস্থা চালু এবং শ্রমিকদের ন্যায় সঙ্গত ধর্মঘটের অধিকার হরণের পাঁয়তারার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবানে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যোগে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে।
০৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয় হতে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে কোর্ট রোড ও চৌমুহনা এলাকা প্রদক্ষিণ করে পুণরায় কার্যালয়ে এসে সমাপ্ত হয়।
পরে জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত শ্রমিকসভায় সভাপতিত্ব করেন ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া। জেলা ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শ্রমিক সভায় বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাস, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ দুলাল মিয়া, চা-শ্রমিক সংঘের নেতা রাধামোহন, জুড়ী উপজেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, সদস্য মোঃ সুবেল মিয়া প্রমূখ।
সভায় বক্তারা সাম্প্রতিক সময়ে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত জনগণের জীবনে নাভিশ্বাস উঠছে।
ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি-মূল্যস্ফীতির এই সময়ে বাচাঁর মত মজুরি না পেয়ে অর্ধাহার-অনাহার ক্লিষ্ট শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণের জীবন চলাই দায় হয়ে পড়েছে। জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি ঘটলেও শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আয় বাড়েনি।
তার উপর আবারও গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা চলছে। জনজীবনের সমস্যাকে উপেক্ষা সরকার প্রভু সাম্রাজ্যবাদের আর্শীবাদ নিয়ে ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে দেশে বিদেশে তৎপরতা চালাচ্ছে, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদের দালাল বিরোধীদলও যেন তেন উপায়ে ক্ষমতায় যেতে তৎপর। বাংলাদেশ একটি নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্ততান্ত্রিক দেশ। এদেশের শাসন ক্ষমতায় এযাবত অধিষ্টিত সকল সরকারই কোন না কোন সাম্রাজ্যবাদের দালাল সরকার।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একক পরাশক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদীদের এবং প্রতিপক্ষ সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া ও বৃহত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে অগ্রসরমান পুঁজিবাদী চীনের ব্যাপক তৎপরতা, প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্রতর হয়ে সামনে আসে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা গণতন্ত্র, মানবাধিকার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে নিষেধাজ্ঞার ধারাবাহিকতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে চাপ প্রয়োগ কৌশলে অগ্রসর হচ্ছে।
অপর দিকে চীন রাশিয়া পশ্চিমাদের এই তৎপরতাকে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘নগ্ন হস্তক্ষেপ’ ‘নব্য উপনিবেশবাদ’ আখ্যায়িত করে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করে কৌশলে তৎপরতা চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীও মুখে মার্কিনের বিরুদ্ধে বিষদগার করে বলেছেন সেন্টমার্টিন দ্বীপ মার্কিনের হাতে তুলে দিলে তার ক্ষমতায় থাকার নিশ্চয়তা হয়ে যায়।
এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে একটি নয়াউপনিবেশিক দেশ তার প্রমাণ হয়। তাই আগামীতে কে ক্ষমতায় আসবে বা কি উপায়ে নির্বাচন হবে তা নির্ধারিত হবে সাম্রাজ্যবাদীদেশগুলো প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে। সাম্রাজ্যবাদী উভয়পক্ষের চাওয়া হচ্ছে স্ব স্ব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সবচেয়ে উপযোগী দালাল দল ও শক্তিকে ক্ষমতায় আনা।
তাই যে দল বা জোট অথবা অন্য কোন শক্তি ক্ষমতাসীন হলেও এদেশের জনগণের কোন লাভ হবে না। বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে অনেক সরকারই জনগণ দেখেছে। তাই এক সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে আরেক সাম্রাজ্যবাদ নয়, এক দালালের পরিবর্তে আরেক দালাল নয়, সকল সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম তীব্রতর করে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দূর্বার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
শ্রমিকসভা থেকে বক্তারা বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণভাবে জাতীয় ন্যূনতম ঘোষণা, সেক্টর ভিত্তিক নিম্নতম মজুরি ঘোষণা ও বিভিন্ন সেক্টরে সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন, অত্যাবশকীয় পরিষেবা বিল-২০২৩ প্রত্যাহার, গণতান্ত্রিক শ্রমআইন ও শ্রমবিধি প্রণয়ন, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠা, ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রমআইন কার্যকর ও চাল,ডাল তেলসহ নিত্যপণ্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি রোধ এবং স্বল্পমূল্যে স্বর্বাত্মক রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবিতে বৃহত্তর শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।
—বিজ্ঞপ্তি ।।