আগামী ১১ জুলাই থেকে ভারতের সঙ্গে রুপিতে লেনদেন
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ
রুপিতে লেনদেন শুরু করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ ও ভারত। দুই প্রতিবেশী দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ লেনদেনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই নিয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে সম্মত ট্রেডিং মেকানিজম অনুসারে, বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা ১১ জুলাই থেকে রুপিতে রপ্তানি আয় পেতে সক্ষম হবে এবং এর সমমূল্যের অর্থ আমদানি বিল নিষ্পত্তির জন্য ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার আগামী ১১ই জুলাই ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে সোনালী ও ইস্টার্ন ব্যাংক রুপি লেনদেনে বিশেষ অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক থেকে অনুমোদন পেয়েছে।
ইস্টার্ন ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলী রেজা ইফতেখার বলেন, তারা রুপি এবং টাকা উভয় মাধ্যমেই লেনদেনের জন্য আবেদন করেছিলেন এবং রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া তা অনুমোদনও করেছে।
প্রাথমিকভাবে, অল্প পরিমাণে রুপিতে লেনদেন হবে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়বে। এছাড়া, টাকায় লেনদেন পরবর্তীতে চালু করা হবে, বলেন তিনি।
এ উপায়ে লেনদেন ধীরে ধীরে ডলারের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রুপিতে লেনদেন ডলার নির্ভরতা কিছুটা কমিয়ে দেবে, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের জন্য ভালো। কিন্তু এতে রুপির বিশেষ সুবিধা আছে, ফলে চুক্তিটি পক্ষপাতদুষ্ট।
ভারতের সাথে বেশ বড় ধরনের বাণিজ্যিক ব্যবধানের কারণে আমরা এবার টাকায় লেনদেন শুরু করতে পারিনি, তবে ভবিষ্যতে আমাদের এটি নিয়ে ভাবতে হবে, তিনি পরামর্শ দেন।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ এবং প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে।
এদিকে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া গত বছর তাদের রপ্তানিকারকদেরকে বাংলাদেশের সাথে ডলার এবং অন্যান্য প্রধান মুদ্রায় লেনদেন এড়িয়ে যেতে বলেছিল। বাংলাদেশের রিজার্ভ কমে যাওয়া রোধ করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
এদিকে ডলার সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে দেশে টাকা-রুপি ভিত্তিক ডেবিট কার্ড চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি উপস্থাপনকালে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এ ঘোষণা দেন।
কার্ডের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা টাকা দিয়ে যেমন দেশের মধ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন, তেমনি একই কার্ড দিয়ে ভারতে রুপিতেও কেনাকাটা করতে পারবেন।
এই কার্ডের মাধ্যমে ডাবল কারেন্সি এক্সচেঞ্জের প্রয়োজনীয়তা মিটবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার ফলে টাকাকে ডলারে এবং এরপর ডলারকে রুপিতে রূপান্তর করতে ৬% এক্সপেন্ডিচার লস সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর।
তিনি আরও বলেন, যেসব বাংলাদেশি পর্যটক ঘন ঘন ভারতে ভ্রমণে যান তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী হবে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ২৫ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ট্যুরিস্ট ভিসায় ভারতে গিয়েছিলেন। তাদের ভ্রমণের প্রধান গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় অনুষ্ঠান, অবসর ও চিকিৎসা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে, রুপিতে লেনদেন কোনো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরিতে সাহায্য করবে না, যতক্ষণ না সংস্থাটি তার এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) বাস্কেটে এ মুদ্রা অন্তর্ভুক্ত করে। এসডিআর বাস্কেটে অন্তর্ভুক্তির অর্থ হলো, মুদ্রাটি একটি আন্তর্জাতিক রূপান্তরযোগ্য মুদ্রা হিসেবে গণ্য হবে।
মার্কিন ডলার, ইউরো, জাপানিজ ইয়েন এবং ব্রিটিশ পাউন্ডের পাশাপাশি ২০১৬ সালে পঞ্চম মুদ্রা হিসেবে ইউয়ানকে এসডিআর বাস্কেটে অন্তর্ভুক্ত করে আইএমএফ।
জানা গেছে, বাংলাদেশে ডলার সংকটের কারণে আগামী সেপ্টেম্বরে টাকা ও রুপিভিত্তিক ডেবিট কার্ড চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি বছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি উপস্থাপনকালে এই ঘোষণা দেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এই কার্ডের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা যেমন দেশের মধ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন, তেমনি ভারতে রুপিতেও কেনাকাটা করতে পারবেন।
এই কার্ডের মাধ্যমে ডাবল কারেন্সি এক্সচেঞ্জের প্রয়োজনীয়তা মিটবে বলেও আশা করা হচ্ছে। যার ফলে টাকাকে ডলারে এবং ডলারকে রুপিতে রুপান্তর করতে ৬% খরচ সাশ্রয় হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, যেসব বাংলাদেশি ঘন ঘন ভারত ভ্রমণে যান তাদের জন্য এটি বিশেষ উপকারে আসবে।