বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ায় কৃষকের আয় কমবে: কৃষিমন্ত্রী

সুরমা টাইমস ডেস্কঃ

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ায় চাষিদের উৎপাদন ও আয় কমে যাবে।

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নেদারল্যান্ডসের পিপলস পার্টি ফর ফ্রিডম অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (ভিভিডি) এমপি ফিম ভ্যান স্ট্রিয়েনের নেতৃত্বাধীন এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি একথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জ্বালানির প্রয়োজন রয়েছে। কৃষি যেহেতু আমাদের একটি মৌলিক বিষয় আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। সেই হিসেবে বিভিন্ন উপকরণ যেমন: সার, রাসায়নিক, পানি, সেচ- এগুলোর ওপর আমরা বিভিন্ন প্রণোদনা ও ভর্তুকি দিয়েছি।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম এতটাই বেড়েছে যে টনপ্রতি আড়াইশ’ ডলারের সার ১ হাজার ডলারে কিনতে হচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দাম বাড়াননি। যখন অর্থ মন্ত্রণালয় প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছিল যে এই দামে আমরা সার দিতে পারব না, আপনারা সারের দাম বাড়ান তখন আমি নিজেও রাজি ছিলাম। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি কথাও বলেছি। তিনি বলেছেন, না, সারের দাম বাড়াব না। সব উন্নয়ন বন্ধ থাকলেও আমরা সারের দাম বাড়াব না। সেই নীতিতে তিনি এখনও অটল আছেন।

বিদ্যুতের দাম বাড়ায় কৃষিতে কিছুটা প্রভাব পড়ার কথা স্বীকার করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ফসলে পানি দিতে না পারলে উৎপাদন কম হবে। হয়তো চাষিদের কষ্ট হবে, তাদের আয় কমে যাবে। তার যে লাভ হওয়ার কথা, সেটি হবে না।

তিনি বলেন, এ দেশের চাষিরা নিজের বউয়ের গয়না কিংবা গরু বিক্রি করেও সার কিনবেন। জমিতে সার দেয়ার ক্ষেত্রে কোনোক্রমেই তারা ঝুঁকি নিতে চান না। হয়তো উৎপাদন ওইরকম কমবে না। কিন্তু চাষিরা ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

কিন্তু সরকারের হাতে এর (বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি) কোনো বিকল্পও নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা তো চাই কৃষকের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাক। আমাদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করেন। তারা জীবিকার জন্য কোনো না কোনোভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যুতের দাম বাড়লে তাদের আয় কমে যাবে, সন্তানদের লেখাপড়াসহ তাদের জীবনযাত্রার মান কমে যাবে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব যেভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে পড়েছে, তাতে সরকারেরও কোনো উপায় নেই।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে নেয়া ঋণের কারণেই বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষি মন্ত্রী বলেন, আইএমএফ তো সারের দামও বাড়াতে বলে। সারে যে ভর্তুকি দিই, সেটিই তো আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক মানে না। তারা সারা জীবন বাধা দিয়ে আসছে। বিএনপির সময়ে যে সার ৯০ টাকা ছিল, আমরা ১৬ টাকায় দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের কথা শুনতে গিয়ে অনেককেই বেশি মূল্য দিতে হয়েছে। তখন তো প্রধানমন্ত্রীর ওপর অনেক চাপ ছিল। তারা বলত, সারে ভর্তুকি দিলে তোমরা উন্নয়ন করবে কীভাবে? তাহলে স্কুল-কলেজ ও রাস্তাঘাটের কী হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি না, বিনিয়োগ করছি। আমরা সেই বিনিয়োগের ফল পাচ্ছি।

সবজি উৎপাদন বাড়ার প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধিররা বিশ্বাস করতে পারছেন না যে ২০০৮ সালে আমাদের ৩ মিলিয়ন টন সবজির জায়গায় বর্তমানে ২২ মিলিয়ন টন সবজি উৎপাদন হচ্ছে পৃথিবীর কোন্ দেশে ১৩ বছরে সবজির উৎপাদন এতটা বেড়েছে?

তাহলে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকার ঝুঁকি নিচ্ছে কি-না, সংবাদকর্মীদের এমন প্রশ্নে হেসে মন্ত্রী বলেন, সেটি তো ঠিকই। চাষির উৎপাদন কিছুটা কমে যাবে। তাদের আয় কিছুটা কমবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।